অনু এখন শোভনের বাড়িতে । শোভন পুজোর কিছু দিন আগে ভেবেছিল ওর জন্ম দিন টা অন্য ভাবে পালন করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে কয়েকদিন মান অভিমানের কারণে সব মাথায় থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তার । বেশ রাগ ও হয়েছিল দুজনার ই , কেউ কারোর সাথে কথা বলা তো দূরে কথা হোয়াটস অ্যাপ এর প্রোফাইল পিক যাতে না দেখতে পায় তার জন্য ব্লক করে রেখেছিল। কষ্ট পেতো দুজনেই , যেমন ভাবে ডান হাত কাটুক বা বাম হাত কষ্ট পায় শরীর ঠিক তেমন । ফেসবুক এর ফেক একাউন্ট থেকে মাঝ রাতে ফটো দেখে বালিশ ও ভিজতো শোভন এর। একদিন রাতে অনুর সাথে সেই হ্যান্ডসম ছেলে টাকে ফটো তে দেখে মনে মনে খুব কষ্ট হয়েছিল তার । মনের দুঃখে অনেক পাগলের মতো উলটো পাল্টা ভেবেও ছিল সে ;
বেশ ভালোই আছি আমি ,
আমাকে কাঁদানোর
কিংবা হাসানোর আজ
কেউ নেই ঠিক! তবে
নিজেকে নিয়ে আর ভাবিনা ।
প্রবল আনন্দে মেতেছি নিজেকে
নিয়ে, হয়তো কোনো দিন হয়ে যাবো
পাগল, তার ঠিক নেই , জীবনের
কিয়দংশ সুখ ও হয়তো আমার
জন্য অবাঞ্ছিত
জানিনা কোন অকারণে ।।
আজও মনে পড়ে তোমায়
গোপনে , লুকিয়ে কিংবা ভ্রমে,
যদিও জানি !
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখীও
হয়তো , আজ তোমাকে
হিংসা করে ।
আচ্ছা ও খুব যত্ন করে
না, তোমায়? খুব ভালোবাসে
তোমাকে ? পূরণ করে ঘুমিয়ে
দেখা তোমার স্বপ্ন গুলো?
যদিও আমি তো
জেগে জেগে ই দেখতাম।
আর বোধ হয় আমার
পাগলামী গুলো মনে
পড়ে না? চাপা পড়ে
গেছে তা তোমার
ভালোবাসার ,
ঘোলাটে ভাটার টানে ।।
অনুর যে গোলাপি রঙের টেডি বিয়ার টাও হঠাৎ করে আষাঢ়ের মেঘের জলে ভিজে যাবে তা ও ভাবে নি। তবুও মাঝে মধ্যে ভিজতো লোনা জলে ।
মাঝ রাতে কোলবালিশ জড়িয়ে স্বপ্ন দেখতো ,কোনো এক রাস্তার ধরে দাড়িয়ে দুজন ; অনুর সেই জ্যোৎস্না মাখা মুখ খানা শোভন এর বুকের মাঝে অস্ফুটে কিছু বলতে চাইছে , আর শোভন ও দুহাত দিয়ে জাপটে আছে তাকে। যেনো কোনো দিন ও হারাতে চায়না কোনো মতে। হঠাৎ জানালার বাইরে মেঘের ভীষণ গম্ভীর গর্জনে ঘুম ভেঙে উঠে বসে শোভন, অবাক হয়ে দেখে কোথায় তার অনু !
অনু কিন্তু নিজের জিদ ভুলে আজ শোভনের বাড়িতে এসেছে। বাধ্য শোভন ও ফিরিয়ে দিতে পারেনি তাকে কিছুতেই। এর মধ্যে হালকা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আকাশে, বর্ষা কাল। সন্ধায় কেমন যেনো গুমরে ছিল আকাশ, তারই ফলশ্রুতি ঘটছে এখন । ৮:৩০ টা বাজলো, অনু তাকে তৈরি হতে বললো তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য, যথা রীতি বেরিয়ে পড়লো দুজন । অনুর স্কুটি তে বেশ আদরে বাড়ি পৌঁছালো দুজন।
একটু একটু করে রাত বাড়লো বাড়ি ফিরতে থাকলো বন্ধুরা । সবাই অনুকে উপহার দিয়েছে কিন্তু যার কাছ থেকে পাওয়া উপহার তার জীবনে অফুরন্ত খুশি এনে দিতে পারে সে এখন ও বিমুখ । দুজনের মধ্যে একটু দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল বলে , প্রথম শুভেচ্ছা জানানো হয় নি তার একটু দেরি হয়ে গেছে। রাত ১১:০০ হলে শোভন অনুর কানে কানে কিছু একটা বললো । এতক্ষণ তার মুখটা বর্ষার মেঘের মতো থাকলেও এবার যেনো মেঘ সরে একটা উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠলো। তৎক্ষনাৎ বাড়ির বাইরে যেতে চাইলে বাবা মা একটু অনুৎসাহি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু শোভনের কথার জাদুতে দুজনেই হার মানলো।
এবার দুজনে বাইপাস ধরে সো সো শব্দে পৌঁছালো তাদের পুরানো সেই জায়গায়। যেখানে তারা আগে দেখা করতো । কিন্তু কেনো যে শোভন এই রাতে তাকে এখানে আনলো কিছুতেই সে ব্যাপারটা মাথায় এলো না । কারণ জন্ম দিনের ব্যাপার টা একটু আগেই মিটে গেছে সে তাকে ঠিক রাত ১২:০০ টায় জানায় ও নি। শোভন আগে থেকে ভেবে রেখেছিল যে অনুর জন্ম দিনটা অন্য ভাবে পালন করবে, কিন্তু ঝগড়া ঝামেলা সব বানচাল করে দিয়েছিল। তবুও সে অনুর বাড়ির অনুষ্ঠানের ফাঁকে বন্ধুদের কে সব ব্যাবস্থা করে রাখতে বলেছিল । সেই মতো ছোটো একটা আয়োজন ।
বাইপাস টার যেখানে ওরা দুজন দাড়িয়ে ঠিক তার দুই পাশের একটি পাশে খাল আর ওপর পাশে প্লটিং করা বাউন্ডারী দেওয়া বিশাল ফাঁকা জমি এখন ঠিক রাত ১১:৫০ । দুজনে স্কুটি থামিয়ে সেখানে দাড়াবার সাথে সাথে কোথা থেকে দুটো বাইক একটা প্যাকেট দিয়ে আবার ফিরে গেলো। একটু হতোবাক হয়েছিল অনু কিন্তু কোনো প্রশ্ন করেনি ।
তখন ও আষাঢ়ের মেঘ সমস্ত জলরাশি বর্ষণ না করে সামান্য একটু জমিয়ে রেখেছিল তাদের জন্য । ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নামলো। শোভন প্যাকেট থেকে সুন্দর একটা কেক বের করে স্কুটির সিট এর উপর রাখলো, অল্প আলোয় দেখে বেজায় খুশি অনু । তার যে আজ আনন্দের বাঁধ ভাঙছে। একটা প্লাস্টিক এর ছুরি ও বের করে সে আস্তে আস্তে অনুর হাতে দিল।
অনু উৎফুল্ল হয়ে কেক এর মধ্যে ছুরি বসাতে গেলে শোভন বাধা দিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালালো কেক এর মাঝে । গভীর রাতে মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে যেন তারা দুজন নিশীথ রাতের জোনাকির মতো জ্বলছিল। যে শ্রাবণ অনুকে জন্ম দিয়েছিল সেই যেনো তাকে ফিরে পাওয়ার আশায় অশ্রু বর্ষণ করছিল। অনু এবার দৃড সংকল্প নিয়ে কেক এর মধ্যে ছুরি বসিয়েছে আর সেই গম্ভীর অপরূপ রাতের একমাত্র প্রত্যক্ষ সঙ্গী শোভন হলেও তার সাথে সাথে শুভেচ্ছা জানতে ভুল করেনি রাতের ঝিঁঝিঁ পোকা ও কামার্ত ব্যাঙ গুলি । তাদের কামার্ত ডাক যেনো আরত বেশি করে আসক্ত করছিলো ওদের দুজনকে । একটুকরো কেক দুজন দুজনের মুখে দিয়ে একটা গভীর নিরবতায় দুজনের হৃদ স্পন্দন একই ছন্দে ধকধক ধকধক করছিলো , এক প্রবল উচ্ছাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল তাদের মন । স্রোতের প্রবল টানে যেমন বিলাতি পানা দিশাহীন ভাবে বয়ে চলে, কোনো বাধা মানে না, গতি যেখানে অপার। সেই গভীর অন্ধকার ময় জলকণা ভেদ করে হঠাৎ দৈত্যের মতো ছুটে আসা ব্রেক ফেল লরির আঘাতে পাশের বাউন্ডারী সেলিব্রেট করে জন্ম দিন , আর পিশে যাওয়া দুটি শরীর পাঁচিলে চেপে হাত বাড়ায় আর একটা হাতের অপেক্ষায়। ততক্ষণে শোভন এর রক্তাক্ত হাতখানি ঝুলে পড়েছে পৃথিবীর টানে মাটির কাছাকাছি। চিৎকারে ডাকার চেস্টা বিফল হয় অনুর। শত চেষ্টায় কোনো মতে গলার স্বর বের হয় না । পাশে পড়ে থাকা স্কুটি র সাইড লাইট এখনও দপ দপ করে জ্বললেও দুটি প্রাণ এর স্পন্দন যেখানে এক হয়ে ধক ধক করেছিল তা বিদায় নিচ্ছে চিরকালের মতো । অনুর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে আর গোঙানির শব্দ মিশে যাচ্ছে বোবা বাতাসে ।।
3 comments:
শেষটা😣😣😣😣😣😣😣😣😣
ভালো হয়েছে লেখাটা
আধুনিক রোমিও-জুলিয়েট
Post a Comment